শিক্ষাদানের ফযীলত সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের উক্তি
* হযরত ওমর (রাঃ) বলেনঃ যেব্যক্তি কোন হাদীস বর্ণনা করে এবং তদনুযায়ী কাজ করে, সে সেসব লােকের সমান সওয়াব পাবে, যারা সে কাজটি সম্পাদন করবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যেব্যক্তি মানুষকে ভাল কথা শেখায়, তার জন্যে সকল বস্তু, এমনকি সমুদ্রের মাছেরা পর্যন্ত এস্তেগফার করে।
* জনৈক আলেম বলেন ঃ জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর সৃষ্ট জীবের মধ্যে যােগসূত্র স্বরূপ।
* বর্ণিত আছে, হযরত সুফিয়ান সওরী (রহঃ) আসকালানে এসে কিছু দিন অবস্থান করেন। কেউ তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করল না। তিনি বললেন ঃ আমার জন্যে সওয়ারী ঠিক করে দাও, আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। এ শহরে জ্ঞানের অপমৃত্যু ঘটবে। এ কথা বলার কারণ, তিনি শিক্ষাদানের মাহাত্ম্য এবং এর মাধ্যমে জ্ঞান অব্যাহত রাখতে প্রয়াসী ছিলেন।
* আতা (রহঃ) বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিবের কাছে গিয়ে দেখি, তিনি কাঁদছেন। আমি কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন : আমাকে কেউ জ্ঞাৰুে কথা জিজ্ঞেস করে না।
* জনৈক মনীষী বলেনঃ জ্ঞানীরা কালের প্রদীপ। স্ব স্ব সময়ে প্রত্যেকেই উজ্জ্বল বাতি বিশেষ। সমসাময়িক লােকেরা তাদের কাছ থেকে আলাে আহরণ করে।
* হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেনঃ আলেম সম্প্রদায় না থাকলে মানুষ চতুস্পদ জন্তুর মত হয়ে যেত। অর্থাৎ, জ্ঞানীরা জ্ঞানদানের মাধ্যমে মানুষকে পশুত্বের স্তর থেকে বের করে মানবতার স্তরে পৌছে দেয়।
* ইকরিমা বলেন। এ জ্ঞানের কিছু মূল্য আছে। লােকেরা জিজ্ঞেস করল ঃ তা কি? তিনি বললেনঃ তা এই যে, তা এমন ব্যক্তিকে শিক্ষা দেবে, যে স্মরণ রাখে এবং বিনষ্ট না করে।
* ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ায বলেন ঃ আলেমগণ উম্মতের প্রতি পিতামাতার চেয়ে অধিক দয়াশীল। লােকেরা জিজ্ঞেস করল ? এটা কেমন করে? তিনি বললেনঃ পিতামাতা মানুষকে দুনিয়ার আগুন থেকে রক্ষা। করে, আর আলেমগণ রক্ষা করেন আখেরাতের আগুন থেকে।
ঃ জনৈক মনীষী বলেন ঃ জ্ঞানের সূচনা চুপ থাকা, অতঃপর শ্রবণ করা, অতঃপর মুখস্থ করা, অতঃপর আমল করা, অতঃপর মানুষের মধ্যে প্রচার করা।
' অন্য একজন বলেন ঃ নিজের জ্ঞান এমন ব্যক্তিকে দাও যে সে সম্পর্কে অও এবং এমন ব্যক্তির কাছ থেকে জ্ঞান আহরণ কর, যে তুমি যা জান ন| তা জানে। এরূপ করলে তুমি যা জান না, তা জানতে পারবে এবং যা জানবে তা মনে থাকবে।
* হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেনঃ আমি এ বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকেও বর্ণিত পেয়েছি যে, জ্ঞান অর্জন কর। কারণ, জ্ঞানার্জন করা খােদাভীতি, তার অন্বেষণ এবাদত, তার পাঠদান তসবীহ এবং তার আলােচনা জেহাদ। যেব্যক্তি জানে না, তাকে জ্ঞানদান করা খয়রাত। যােগ্য ব্যক্তির জন্যে তা ব্যয় করা নৈকট্য। জ্ঞান একাকীত্বে সহচর, সফরে সঙ্গী, একান্তে বাক্যালাপকারী, ধর্মের পথপ্রদর্শক, সচ্ছলতা ও নিঃস্বতা উভয় অবস্থায় পথপ্রদর্শক, বন্ধুদের সামনে প্রতিনিধিত্বকারী, অপরিচিতদের মধ্যে নৈকট্যকারী, শত্রুর বিরুদ্ধে হাতিয়ার এবং জান্নাতের পথে আলােকবর্তিকা। এ জ্ঞানের বদৌলত আল্লাহ তা'আলা কিছু লােককে উচ্চ মর্তবা দান করেন। তাদেরকে কল্যাণমূলক কাজে সর্দার, নেতা ও পথপ্রদর্শক করেন। তাদের দেখাদেখি অন্যরা কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। মানুষ তাদের পদাংক অনুসরণ করে চলে এবং তাদের ক্রিয়াকর্মের প্রতি তাকিয়ে থাকে। ফেরেশতারা তাদের বন্ধুতু কামনা করে এবং পাখা দ্বারা তাদেরকে মুছে পরিষ্কার করে। প্রাণী ও নিষ্প্রাণ সবাই তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি, সমুদ্রের মৎস্য, পােকমাকড়, স্থলের হিংস্র সরীসৃপ ও চতুষ্পদ জীব-জন্তু এবং আকাশ ও তারকারাজি পর্যন্ত মাগফেরাতের দোয়া করে। কারণ, জ্ঞান আত্মার জন্য জীবনী শক্তি। এর কারণে মূর্খতা থাকে না। জ্ঞান একটি নূর। এটি যার মধ্যে থাকে তার সামনে থেকে। অন্ধকার সরে যায়। জ্ঞানের দ্বারা দেহ শক্তি পায় এবং দুর্বলতা দূরীভূত হয়। এর সাহায্যে বান্দা সৎলােকদের মর্তবা ও উচ্চ মর্যাদা লাভ করে। জ্ঞান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা রােযা রাখার সমান এবং জ্ঞানদানে মশগুল থাকা রাত জেগে নফল এবাদত করার সমান। জ্ঞানের কারণেই আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য, একত্বে বিশ্বাস ও এবাদত হয়। এর মাধ্যমেই পরহেযগারী, তাকওয়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং হালাল হারামের জ্ঞান অর্জিত হয়। জ্ঞান ইমাম এবং আমল তার। অনুসারী। সৎলােকদের অন্তরেই এর জন্যে স্থান করা হয় এবং হতভাগ্যরা এ থেকে বঞ্চিত থাকে। আমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে তওফীকপ্রার্থী।
Comments
Post a Comment